রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর ঝিলপাড়ে ঢাকা সাংবাদিক সমিতির বরাদ্দকৃত সাত একর জমি উদ্ধারে বস্তি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ সদস্যরা এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযোগ উঠেছে, অভিযানে গৃহায়ণের জমি নয়, এমন জমি থেকেও বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অনেককেই খোলা আকাশের নিচে মালামাল নিয়ে রাত কাটাতে দেখা গেছে। ঠান্ডার মধ্যে আগুন জ্বালিয়েও অনেকেই রাত কাটিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন ঠিকানার সন্ধানে রয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে হুকুম দখল হয়নি (কিছু জমি) এমন তথ্য সরবরাহ করা সত্ত্বেও তিনি কর্ণপাত করেননি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে গড়ে ওঠা একটি গরুর খামারের প্রায় পুরোটাই ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে বস্তির বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, যার ফলে আশেপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। স্থানীয় হোটেলগুলোতেও খাবারের সংকট দেখা দেয়।
২০০৬ সালে ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঝিলপাড়ে সাত একর জমি বরাদ্দ দেয়। সমিতির দাবি, তিন বছর পর জমিটি বেদখল হয়ে যায়। সমিতির সভাপতি সদরুল হাসান জানান, বর্তমান সরকারের আমলে জমিটি পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার লোকজন জমিটি দখল করেছিল এবং প্রতিবার উচ্ছেদের পর তারাই আবার দখল করে নিত।
তবে সদরুল হাসানের এ দাবির বিপরীতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, ইলিয়াস মোল্লা ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অথচ সমিতি ২০০৬ সালে জমি বরাদ্দ পায়। বরং সমিতির লোকজনকে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এর মধ্যে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কাগজপত্র সংশোধন করে নেওয়ার বিষয়টিও ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত বছর জমি বুঝে নেওয়ার অংশ হিসেবে একটি পেন্টাগ্রাফ (জমির প্রকৃত অবস্থান বের করতে তুলনামূলক নকশা) তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর আগায়নি বলেও তিনি জানান। যারা এই জমির আদি মালিক ছিলেন, তাদের কেউ কেউ ঘর বানিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান।
আরেকটি সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের দিকে সমিতির তৎকালীন সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সহযোগিতার অংশ হিসেবে তিনি (এমপি) গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিকে তলব করেন। সমিতির বরাদ্দ পত্রে দেখা যায়, তাদের দুয়ারীপাড়া মৌজার জমি বরাদ্দ করা হয়েছে, কিন্তু তারা সেনপাড়া পর্বতা এবং মারুল মৌজার জমি দখলে নিয়েছিলেন। এ অবস্থায়, সাবেক সংসদ সদস্য বরাদ্দপত্র সংশোধন অথবা দুয়ারীপাড়া মৌজা থেকে জমি বুঝে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে সেনপাড়া পর্বতা মৌজার সিএস/এস ৬ দাগের আংশিক এবং মারুল মৌজার সিএস/এসএ ৩৯, ৪৫, ৪৬ দাগের মোট সাত একর জমি উল্লেখ করে বরাদ্দপত্র সংশোধন করা হয়।
জমি উন্নয়নে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে সমিতির যোগাযোগ হলেও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিরোধের কারণে তা আর আগায়নি। এর মধ্যে সমিতির সভাপতির পদেও পরিবর্তন আসে। ক্যান্টনমেন্টের সীমানা লাগোয়া হওয়ায় ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি সমিতির দেওয়া শর্তে রাজি হচ্ছিল না।
ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে উচ্ছেদের প্রসঙ্গে ওই ব্যক্তি জানান, ঐ জমিগুলো সিএস ৭ নং দাগের অংশ, যা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করেনি। স্থানীয় মোল্লা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের দখলে ছিল এই জমি। উচ্ছেদ করা খামারটিও এই ৭ দাগের অংশ।
এদিকে, আগাম নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাসিন্দারা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। তবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাইয়েবুর রহমান আশিক জানিয়েছেন, আগাম নোটিশ দেওয়ার পরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: