ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা উত্তরায় মেয়ের বাসায় তিনি প্রাণ ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোস্তাক আলম টুলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের ৩১ আগস্ট ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ইসলাম নগর খানকা শরীফে মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন ইসলাম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে।
এরপর ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেণি পড়েছেন বর্তমান ঠাকুরগাঁও সরবকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৭৫ সালে ইসলাম নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭৯ সালে বিএ পাস করেন মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী। সরকারি কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
তিনি ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সামরিক আইন জারির সময় গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের সুসংগঠিত করে সভা, সমাবেশ মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন সংগ্রামেও লিপ্ত ছিলেন। সেই সময়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় আন্দোলনে আরও কার্যকরী হন মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী। তার আন্দোলনের পর পুনরায় চাকরিতে যোগদান করতে সক্ষম হন অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ।
১৯৮২ থেকে ৮৩ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ১৯৮৪-৮৬ সাল পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন তিনি। পরে স্থান পান জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। ১৯৯১ সালে দায়িত্ব পান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের। এরপর ১৯৯৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে দলীয় কোন্দলে দল জড়িয়ে পড়ে জেলা আওয়ামী লীগ। কমিটি কেন্দ্র থেকে ভেঙে দেওয়া হয়। সাদেক কুরাইশী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে কোন্দল দূর করে দলকে সুসংগঠিত করেন।
২০০৫ সালের দলীয় কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাদেক কুরাইশী। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বে পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগ দেন সাদেক কুরাইশীকে। নিয়োগ প্রাপ্তির পর জেলা পরিষদ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টিয়ে ইতিবাচকে নিয়ে এসেছেন। দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জেলার উন্নয়ন করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ম্যুরাল ও স্মৃতিফলক স্থাপন করেছেন জেলা পরিষদ থেকে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরে ২০১৯ ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী।
আরও পড়ুন: