পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস ছাড়াই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েতগামী বিমানে উঠে আলোচনায় আসা শিশু জোনায়েদ মোল্লাকে (১২) বাড়িতে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাকে বাড়িতে আনা হয়। পরে বুধবার সকালে পরিবারের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় জুনায়েদ। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে ধরে এনে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বলে জানা যায়, এর আগেও কাউকে কোনো কিছু না বলে চলে যাওয়ায় ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো জোনায়েদকে। চার দিন আগে দাদির কাছে মাদ্রাসায় যাওয়ার ওয়াদা করে বের হয়ে ঢাকায় গিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কুয়েতগামী বিমানে উঠে পড়ে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জুনায়েদকে একনজর দেখেতে তার বাড়িতে ভিড় করেছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লার প্রথম পক্ষের ছেলে জোনায়েদ মোল্লা। বেশ কয়েক বছর আগে তার মা অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সৎমায়ের কাছে বড় হতে থাকে জোনায়েদ। ভর্তি করে দেওয়া হয় উপজেলার উজানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। তবে বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না বলে বাইরে চলে যায় জোনায়েদ। তবে এবার ঘটিয়েছে আবাক কাণ্ড। যা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে জোনায়েদ মোল্লা তালাবদ্ধ ঘর থেকে বের হয়েই প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর থেকে বাসে উঠে চলে যায় ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বসুন্ধরা হয়ে সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। পরে ওপরে উঠতে গেলে বাধা পেয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে জোনায়েদ। বিমানবন্দরের ৯টি গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে সোজা উঠে পড়ে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের (কেইউ-২৮৪) রাত ৩টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর জুনায়েদ ভেতরে করিডোরে হাঁটাচলা করছিল। এ সময় কেবিন ক্রু জুনায়েদকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন সে একটি সিটে বসে পড়ে। একপর্যায়ে জুনায়েদ যেই সিটে বসেছিল পাশের সিটের যাত্রী তাকে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে বসতে বলে। কিন্তু সে তার বাবা-মায়ের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারেনি। এর আগেও বাড়ির কাউকে কিছু না বলে ঢাকা, মংলা, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে জোনায়েদ চলে যায় বলে জানায় তার পরিবার।
জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, জোনায়েদ চলে যাওয়ার পর খোঁজাখুঁজি করা হয় বিভিন্ন স্থানে। পরে এয়ারপোর্ট থানা থেকে ফোন আসার পর জোনায়েদের খোঁজ পাই আমরা। আমার ভাই (জোনায়েদের চাচা) সেখানে গিয়ে জুনায়েদকে পুলিশের কাছ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ি এসে সকালে পালিয়ে যায় জোনায়েদ। পরে খুঁজে বের করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে ঘরের খুঁটির সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: