ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 

প্রেম করে বিয়ে, ৫ মাস পর কলেজছাত্রীকে ‘পিটিয়ে হত্যা’

এহসান রানা, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ১১ জুলাই ২০২৪

শেয়ার

প্রেম করে বিয়ে, ৫ মাস পর কলেজছাত্রীকে ‘পিটিয়ে হত্যা’

যৌতুকের দাবিতে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্রী তানজিলা আক্তার তহেরাকে (২১) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী জিসান আহমেদের (২১) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তানজিলার বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা তোবারেজ মোল্লা ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোঃ সালাউদ্দিন। এদিকে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে জিসান আহমেদকে আটক করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ।

এর আগে বুধবার ( ১০ ই জুলাই)  রাত ১০ টার দিকে জিসান শহরতলীর গঙ্গাবর্দী এলাকার ভাড়া বাড়িতে তানজিলাকে পিটিয়ে আহত করে। এরপর তা আত্মহত্যার চেষ্টা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের ডা. লিটন গাঙ্গুলি তানজিলার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। মেডিকেলে সার্জারি ওয়ার্ডের ৫ তলার বেডের দেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।

নিহত তানজিলা আক্তার ফরিদপুর সদরের ডোমরাকান্দি উত্তর পাড়া গ্রামের তোবারেজ মোল্লার মেয়ে। প্রায় ৫ মাস আগে প্রেমের সর্ম্পক করে সদরের পূর্ব গঙ্গাবর্দী এলাকার জাহিদ ফকিরের ছেলে জিসান আহমেদের ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়।

তানজিলার বাবা তোবারেজ মোল্লা জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আমার মেয়ের উপর জিসান ও তার মা জবেদা বেগম নির্যাতন করতো। জিসানের মোটরসাইকেল দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিতে দিতো। আবার জিসানকে বিদেশে পাঠাবে বলে টাকা চেয়ে পাঠাতো আমার মেয়েকে দিয়ে। আমার মেয়েও এ বিষয়টাতে সায় দিতো না বলে গত দুই মাস আগে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার সকল ডকুমেন্ট আমি থানায় জমা দিয়েছি।

তিনি আরো জানান, গতকাল রাত ৮ টার দিকে আমার মেয়ের সাথে কথা হয়। রাত ১২ টার দিকে আমার মেয়ের নম্বর দিয়ে জিসানের এক বন্ধু ফোন করে জানায়, তানজিলা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। তাকে মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে। আমরা রাতেই হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি। জিসান বা কাউকে আমরা তখন কাছে পাইনি। আমার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জিসান নেশাগ্রস্থ ছিল। যৌতুক না পেয়ে আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। 

জিসানের মা জবেদা বেগম বলে, জিসান ও তানজিলা দুজন ভালবেসে বিয়ে করেছিলো। তাকে কেন জিসান নির্যাতন করতে যাবে ? আর আমিও কখনও যৌতুকের জন্য তানজিলাকে নির্যাতন করিনি। জিসান আমাকে গতকালের ঘটনা যা বলেছে তা হলো, জিসান বাড়ির বাইরে একজনের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য রাত অবধি অপেক্ষা করছিল। রাত ১০টার পরে তানজিলার ফোনে সে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা হয় টাকা না নিয়েই। বাড়িতে গিয়ে সে দরজা বন্ধ দেখতে পায়। পাশের এক দোকান থেকে রড নিয়ে দরজা ভেঙ্গে জিসান দেখতে পায়, তানজিলা ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। তারপর স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোঃ সালাউদ্দিন জানান, জিসান ও তানজিলার মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। যৌতুকের জন্য তানজিলার উপর নির্যাতন করা হতো। জিসানের পরিবারের পক্ষ হতে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও তানজিলার শরীরে স্বাভাবিক কিছু জখমের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনার মেয়ের বাবা একটি অভিযোগ প্রদান করেছে। আমরা জিসানকে আটক করেছি। অনেকগুলো দিক বিবেচনা করে আমরা এগুচ্ছি। তবে এখনই এটিকে হত্যা বলতে পারছি না। এটি হত্যা না আত্মহত্যা এ বিষয়ে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে বলা যাবে। আমাদের আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

novelonlite28
umchltd