ঢাকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ 

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় চাকরি ছাড়লেন জাবি শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ২৫ জুলাই ২০২৪

শেয়ার

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় চাকরি ছাড়লেন জাবি শিক্ষক

কোটা আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যহতি নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ইমেইলযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসানের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর পদত্যাগপত্রটি পাঠান তিনি।

পরে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন। আজ পদত্যাগপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ইমেইলের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষকদের ভূমিকায় আমি লজ্জিত এবং মর্মাহত। রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে শিক্ষকদের মনুষত্ব ও বিবেক আজ ভুলুণ্ঠিত। এমন স্বাধীন দেশ তো আমরা আশা করিনি। লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে। শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু দেখেও আজ আমরা না দেখার ভান করে আছি।’

এদিকে উপাচার্যকে জমা দেওয়া অব্যাহতিপত্রে তিনি লিখেছেন করেছেন, ‌‘বিগত প্রায় ১৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছি আমি। দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে অনেক ব্যাথিত করেছে। আমি সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছি এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বদা পাশে থেকেছি।

তিনি আরো লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের মতো একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে। সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারত তাহলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। যে সকল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে তাদেরকে নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সাথে সাথে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত।

তিনি আরো লিখেছেন, ‘গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা এই জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং কিছু সংখ্যক প্রতিবাদী শিক্ষকদের রক্তাক্ত করার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড দেখেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের আমি নির্লিপ্ত থাকতে দেখেছি।’

‘শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলীয় করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। শহীদ শিক্ষার্থী এবং আহত শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রকাশ করছি এবং তাদের জন্য দোয়া করছি। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে আমি সহযোগী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাকুরী হতে স্বেচ্ছায় অব্যহতি ঘোষণা করছি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমরা আজ সকালে উনার পদত্যাগপত্রের ইমেইলটি পেয়েছি।’

প্রসঙ্গত, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। ২০২১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। বর্তমানে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। 

জাহিদুল করিম ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ২০০৭ সালে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। এমবিএতে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথমস্থান অধিকার করেন তিনি। ২০০৯ সালে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। এরআগে বিইউবিটি এবং বিএফটিআই-এ কিছুদিন শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছিলেন।

novelonlite28
umchltd