প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সেরা কাজের পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জমকালো এক আয়োজনে ‘স্বপ্নধরা বিএফডিএ অ্যাওয়ার্ড ২০২২-২৩’ শিরোনামে বিভিন্ন বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্বপ্নধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ উর রশিদ এবং বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ-এর চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)-এর সভাপতি রাজু আলীম ও সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ সহ শোবিজ তারকারা।
এ আয়োজনে আজীবন সম্মাননা (২০২২-২৩) পেয়েছেন—এ জে মিন্টু-সোহেল রানা ও কাজী হায়াৎ-এম এ আলমগীর। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত তাদের হাতে আজীবন সম্মাননা তুলে দেন।
এসময় অনুভূতি ব্যক্ত করে চলচ্চিত্র পরিচালক এ জে মিন্টু বলেন, ‘গত ২৬ বছর ধরে আমি পরিচালনায় নেই। আমি একজন চলচ্চিত্রের মানুষ সেটিই ভুলতে বসেছিলাম। তবে এ সম্মাননা পেয়ে মনে হচ্ছে যে, আমি একজন চলচ্চিত্রের মানুষ।’
আপ্লুত কণ্ঠে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘১৯৭৪ থেকে ২০২৪, প্রায় ৫০ বছর। তবে কি আমার বিদায়? হে চলচ্চিত্রের মানুষরা আমাকে বিদায় দিও না। চলচ্চিত্র আমার প্রেরণা ও বেঁচে থাকা। আমি চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিতে চাই না। আমি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই। আমাকে চলচ্চিত্রে রেখো। আজীবন সম্মাননা পাওয়াতে মনে হচ্ছে আমার বিদায়। আজীবন চলচ্চিত্রের মানুষ হয়েই সবার মাঝে থাকতে চাই।’
সোহেল রানা বলেন, ‘বলার অনেক কিছু ছিল। কিন্তু আজ আর বলব না। কারণ, বলার ইচ্ছেটা অনেকটা মিলিয়ে গেছে। সুন্দর একটি আয়োজন করায় সবাইকে ধন্যবাদ। এটা যেন হঠাৎ করে মৃত্যু না হয়। বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার আগেই বাংলা সিনেমা তৈরি হয়েছে। সবাই চলচ্চিত্রের সঙ্গে থাকবেন।’
আলমগীর বলেন, ‘অ্যাওয়ার্ড জীবনে অনেকবার পেয়েছি। আজ আবার পেলাম ভালো লাগছে। সত্যিকার অর্থে আমি ততটা মেধাবী শিল্পী নই। তবে একজন ভাগ্যবান শিল্পী। আমি খুব বড় বড় পরিচালকদের সাথে কাজ করেছি। তারা একেকজন একেকটা ইনস্ট্রিটিড। আজ তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
এ আয়োজনে ২০২২ সালে শ্রেষ্ঠ ওয়েব ফিল্ম বিভাগে ‘টান’র জন্য রেদওয়ান রনি, শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার ভিকি জাহেদ (রেডরাম), শ্রেষ্ঠ পরিচালক রায়হান রাফি (টান), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী (রেডরাম), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সিয়াম আহমেদ (টান) পুরস্কার পেয়েছেন।
চলচ্চিত্র বিভাগে শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার নির্মলেন্দু গুণ (দেশান্তর), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা নুরুল আলম আতিক, আশুতোষ সুজন ও ডালিম কুমার। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য মাহমুদ দিতার (বিউটি সার্কাস), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক নেহাল কোরেশি, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদক সিমিত রায় অন্তর, শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হাবিবুর রহমান (গলুই), শ্রেষ্ঠ গীতিকার জনি হক (পরাণ), শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা, শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা, শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী অয়ন চাকলাদার, শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা গাজী রাকায়েত (বিউটি সার্কাস), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরাণ, প্রযোজক: তামজিদ অতুল। শ্রেষ্ঠ পরিচালক রায়হান রাফি (দামাল), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম (পরাণ), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শরিফুল রাজ (পরাণ)।
শ্রেষ্ঠ ওয়েব ফিল্ম ২০২৩: বাবা সামওয়ান ফলো মি (উম্মে খাইরুল ইসলাম), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার শিহাব শাহীন (বাবা সামওয়ান ফলো মি), শ্রেষ্ঠ পরিচালক শিহাব শাহীন (বাবা সামওয়ান ফলো মি), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ (নিকষ), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান (পরী)।
চলচ্চিত্র বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শাকিব খান (প্রিয়তমা), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী শবনম বুবলী (প্রহেলিকা), শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার রায়হান রাফি (সুড়ঙ্গ), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচিয়তা ফারুক হোসেন (প্রিয়তমা), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য (১৯৭১ সেই সব দিন), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক সুমন সরকার (সুড়ঙ্গ), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী (কিলহিম), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রিয়তমা (প্রযোজক: আরশাদ আদনান), শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিমেল আশরাফ (প্রিয়তমা), শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম (প্রিয়তমা), শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক হাবিবুর রহমান (প্রহেলিকা), শ্রেষ্ঠ গীতিকার সোমেস্বর অলি (প্রিয়তমা), সঙ্গীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ (প্রিয়তমা), শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী কোনাল ও বালাম (প্রিয়তমা)।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, পৃথিবীর যে কোনো দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার শক্তিশালী গণমাধ্যম হচ্ছে সেই দেশের চলচ্চিত্র। নতুন প্রজন্ম তার শেকড়ের গন্ধ খুঁজে পায় সেই দেশের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি আয়োজনের স্বপ্ন দেখেছিলাম। অবশেষে সুন্দর ভাবে শেষ করতে পারায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনা করেন—আঁচল-শিপন মিত্র, মাহিয়া মাহি-জয় চৌধুরী, নিরব-পরীমণি-ইমন, মেহজাবীন চৌধুরী, জিয়াউল রোশান-মন্দিরা প্রমুখ। গান পরিবেশনা করেন কোনাল-বালাম ও কনা-ইমরান।
আরও পড়ুন: