দূর্বা ঘাসে মাকড়সার জাল। সূর্যের আলো পড়তেই চিকচিক করে উঠছে শিশিরবিন্দু। সঙ্গে বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়া কানে কানে বলছে শীত এসেছে। শহুরে জীবনে সেভাবে না বোঝা গেলেও গ্রামীণ জনপদে এই আমেজটা এখন বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সকালে জানালা খুললেই দেখা মিলছে কুয়াশার। হিমেল পরশ গায়ে মেখে কাজে মেতে উঠছেন পল্লীবধূ। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত আর হরেক পদের তরকারিতে চলছে সকালের আতিথেয়তা।
পাড়া-মহল্লার দোকানে চোখে পড়ছে লেপ-তোশক তৈরির চিত্র। কোথাও আবার দেখা যাচ্ছে, গাছ থেকে পাতা ঝরছে। ঝরছে শিউলি ফুলও।
ভোরের সোনারাঙা রোদে গ্রামের ছোট্ট বাজারে চায়ের দোকানে বসছে জটলা। এক কাপ চায়ে চনমনে হয়ে উঠছে সবার মন। কোথাও আবার ঢেঁকির ছন্দে চলছে নতুন চালের গুড়া তৈরির কাজ। গাছিরাও ব্যস্ত খেজুর গাছ কাটতে।
এমন অবস্থায় শীতের কাপড়ের ব্যবহার শুরু না হলে শেষ রাতে গায়ে কাঁথা চাপাচ্ছেন অনেকেই। তারা বলছেন, দিনের বেলায় খুব একটা অনুভূত না হলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ঠিকই টের পাওয়া যায় শীত আস্তে আস্তে আসছে। তাছাড়া শরীরের ত্বকেও টান পড়ছে, শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে ঠোঁট।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে, ফুটপাতে বসেছে মুখরোচক পিঠাপুলির পসরা। পাশাপাশি বাজারে মিলছে শীতকালীন টাটকা সবজিও।
এদিকে আগামী তিন মাসের (নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময় সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে ২ থেকে পাঁচটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে ১ থেকে দুটি নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এ ছাড়া আগামী তিন মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। একইসময়ে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসতে পারে। এতে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দেশে ৮ থেকে ১০টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে তিনটি তীব্র শৈত্য প্রবাহে রুপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের লোকজন সকালের দিকে শীতের অনুভূতি পাচ্ছেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পঞ্চিমাঞ্চলে শীতের অনুভূতি তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে। তবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইবে ডিসেম্বরের শেষ ও জানুয়ারির শুরুতে।
আরও পড়ুন: