বাংলাদেশের মানুষ বিরোধীদের রাজনীতিকে প্রত্যাখান করেছেন। সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক শক্তি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় মন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। কিন্তু জনগণ তাদের প্রত্যাখান করলেও বিএনপি ও তাদের দোসর মৌলবাদীরা এখনও সক্রিয় ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। বিদেশি মদদে তারা ফের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে। সামাজিক গণমাধ্যমের মাধ্যমেই তারা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারে মেতে উঠেছে। কুৎসাকারীদের সমানে মদদ জোগাচ্ছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় বিরোধিতা করেছিল চীন। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় বাংলাদেশের স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি তারা। আমরা সকলেই জানি, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিল ভারত। পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণ যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা ভুলবার নয়। একাত্তরেই দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে লেখা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্পর্ককে কালীমালিপ্ত করতে চাইছে কেউ কেউ। বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি কয়েকটি জনবিচ্ছিন্ন তথাকথিত বামপন্থী শক্তিও হাত মিলিয়েছে ভারত বিরোধী অপপ্রচারে। তাদের পুরো প্রচারণা চলছে চীনা দূতাবাসের সক্রিয় সহযোগিতায়, এমনটাই শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। পাকিস্তান বা অন্য দেশে বসে চলছে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব বিরোধী অপপ্রচার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে সমানে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে চলেছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় মত্ত ষড়যন্ত্রীরা।
সামাজিক গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, দেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচনের পর ভারতবিরোধী প্রচার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বেশিরভাগ অপপ্রচারের মূল কথাই হলো, ভারতের জন্যই নাকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের ক্ষমতায় ফিরেছেন। অথচ বাংলাদেশের মানুষই উন্নয়নের স্বার্থে ফের জয়যুক্ত করেছে আওয়ামী লীগকে। নির্বাচনে ভারত পুরোপুরি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ। তারাই জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতিকে প্রত্যাখান করেছেন। তবু চলছে ভারত বিরোধী প্রচারণা।
বাংলাদেশের কিছু মানুষ এখনও মৌলবাদ দ্বারা প্রভাবিত। তারা ধর্মীয় কারণে ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তাদের ধারনার কোনও মিল নেই। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছিল অগণিত ভারতীয়ের রক্তের বিনিময়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়রা আমাদের পাশে না দাঁড়ালে স্বাধীনতা লাভ এতো সহজে হতো না। কিন্তু বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদের মতো ভারত বিরোধী শক্তি অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসাবেই তারা পরিচিত। কারণ মুক্তিযুদ্ধেরও তারা বিরোধিতা করেছিল। এখন ফেসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভারত-বিরোধিতার নামে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে চলেছে। ভুল তথ্য প্রচার করে তারা প্রমাণ করতে চাইছে, ভারতের মদদেই নাকি বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে। ভারত বিরোধী উসকানি দিতে গিয়ে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিয়েছে। আশ্রয় নিয়েছে অবাস্তব প্রচারণার। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পুরো উল্টো।
অপপ্রচারে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রা ভান্ডারের সঙ্কটের জন্যও দায়ী করা হচ্ছে ভারতকে। কিন্তু আসলে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রা ভান্ডারে টান পড়ার জন্য দায়ী চীন। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার সর্বাধিক বহিঃপ্রবাহ হচ্ছে চীনে। ভারতের তুলনায় চীন থেকে অনেক বেশি মানুষ বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছেন। ফলে রেমিটান্সও অনেক বেশি যাচ্ছে চীনেই। উচ্চ বেতনের চাকরিতেও ভারতীয়দের থেকে অনেক বেশি সংখ্যক চীনারা রয়েছেন আমাদের দেশে। বাংলাদেশি অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে ভারতীয়দের তুলনায় চীনের দখলদারি অনেক গুণ বেশি। তবু চলছে ভারত বিরোধী অপপ্রচার। ভারতীয়দের টার্গেট করা হচ্ছে সর্বত্র। অথচ চীনা কোম্পানিগুলো নিজেদের কর্মীদের বেশি পয়সা দিলেও বাংলাদেশীদের অনেক কম পয়সার বিনিময়ে কাজ করতে বাধ্য করছে। বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিচ্ছে শ্রমিক বিক্ষোভও।
ভারত বিরোধী প্রচারে নেমে দেশকে অস্থির করে তোলার অপপ্রয়াসও চোখে পড়ছে। ভারত-বিরোধীরা নানাধরনের কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত রয়েছেন অনেকে। তাদের এইসব প্রচারনায় চীনা দূতাবাসের সম্পৃক্ততাও চোখে পড়ার মতো। বিরোধীদের সঙ্গে চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বৈঠক বেড়েছে। বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গেও চলছে চীনাদের মতবিনিময়। উদ্দেশ্য একটাই ভারত বিরোধিতা। কারণ বাংলাদেশকেও শ্রীলঙ্কা অথবা পাকিস্তান বানাতে চায় বেইজিং। অর্থনৈতিক দেউলিয়া বানিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে জিম্মি রাখতে চায় নব্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীন। তাই তারা ভারতের মতো বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টায় মদদ দিচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশে ভারত বিরোধী আন্দোলন তীব্র করতে গত মাসেই বৈঠক করেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল (জেএমসি), জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমোর্চা (জেজিজি) এবং বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (বিএসডি) নেতারা। বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেএমসির সাধারণ সম্পাদক ড. ফয়েজুল হাকিম লালা, জেজিজির সভাপতি জাফর হোসেন এবং বিএসডির সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। সেই বৈঠকেই ঠিক হয়, মার্চের শেষ সপ্তাহে বা এপ্রিলে ভারতবিরোধী আন্দোলনের নীল নকশা তৈরি করা হবে। পুরো বিষয়টিই হবে চীনা দূতাবাসের সম্পৃক্ততায়। বাংলাদেশে ভারত বিরোধী আন্দোলন তীব্র করার জন্য তহবিলও সংগ্রহ করা হচ্ছে। জানা গেছে, আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রেও চীনা দূতাবাস অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। চীন চাইছে বাংলাদেশের মাটিতে ভারত বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র হোক।
আওয়ামী লীগের কাছে পর্যদুস্ত হয়ে বিএনপি-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো এখন নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই চীনা ফাঁদে পা দিয়েছে। তারা শুরু করেছে অন্ধ ভারত বিরোধিতা। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সর্বনাশ ডেকে আনতে চলেছে চীনা নির্ভরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবিষয়ে সতর্ক থাকায় পরিস্থিতি এখনও আমাদের অনুকূলে রয়েছে। চীনারা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানে সফল হলেও বাংলাদেশে তারা এখনও তেমন সাফল্য পায়নি। তাই বিরোধী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও গ্রাস করতে চাইছে তারা। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের আস্থা রেখে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা অবশ্য চলছে। বাংলাদেশের মাটিতে কমিউনিস্টশাসিত চীনেরও হাতিয়ার এক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগ। নিজেদের দেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালালেও এখানে ইসলামি মৌলবাদী শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে তারা। ভারত বিরোধী অপপ্রচারের নামে আসলে চলছে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রচারণা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বকেই দূর্বল করার মরিয়া ষড়যন্ত্র চলছে। একে প্রতিহত করতেই হবে।
আরও পড়ুন: