ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ 

মোদির কুয়েত সফর: ঐতিহাসিক মোড়, নতুন অধ্যায়ের সূচনা

ঢাকা এজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

শেয়ার

মোদির কুয়েত সফর: ঐতিহাসিক মোড়, নতুন অধ্যায়ের সূচনা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক কুয়েত সফর (২১-২২ ডিসেম্বর, ২০২৪) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৪৩ বছর পর কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই প্রথম কুয়েত সফর উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের কূটনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ভারতের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক নীতির গতিশীলতা এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি)-এর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কৌশলগত প্রচেষ্টার প্রতিফলন ঘটেছে এই সফরে।

ঐতিহ্যের স্বীকৃতি, সম্পর্কের উষ্ণতা

শতাব্দী প্রাচীন ভারত-কুয়েত সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর সাংস্কৃতিক বিনিময়, বাণিজ্য এবং ভারতীয় প্রবাসীদের অবদান। কুয়েত সরকার মোদিকে তাদের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা, ‘মোবারক আল-কবির অর্ডার’ প্রদান করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে তার অবদানের স্বীকৃতি। এটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিংশতম আন্তর্জাতিক পুরস্কার, যা তার বৈশ্বিক কূটনৈতিক প্রভাবের প্রমাণ।

অর্থনীতি ও কৌশলের নতুন দিগন্ত

জিসিসি ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই পক্ষের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৮৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার। জিসিসি'র বর্তমান সভাপতি হিসেবে কুয়েত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক নীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মোদির সফরে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে ও আলোচনা হয়েছে, যেখানে কুয়েতের তেলের মজুত ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রযুক্তি এবং সবুজ জ্বালানিতে ভারতের অভিজ্ঞতা কুয়েতের ‘ভিশন ২০৩৫’ সংস্কার অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় সহযোগিতা

উপসাগরীয় ভূ-রাজনীতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ভারত ও কুয়েতের মধ্যে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তির মাধ্যমে যৌথ প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

প্রবাসী কল্যাণে অঙ্গীকার

কুয়েতে বসবাসরত প্রায় দশ লক্ষ ভারতীয়ের কল্যাণ ভারত সরকারের অগ্রাধিকার। মোদির একটি শ্রমিক শিবিরে সফর এই অঙ্গীকারের প্রমাণ। মঙ্গাফ অগ্নিকাণ্ডের পর এই সফর প্রবাসীদের নিরাপত্তার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার প্রমাণ দেয়।

সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন

মোদি আরবিতে রামায়ণ ও মহাভারত অনুবাদকারী আব্দুল্লা আল বারাউন এবং প্রকাশক আব্দুল লতিফ আল নেসেফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কুয়েতে বসবাসরত ১০১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় বিদেশ সেবা কর্মকর্তা মঙ্গল সাইন হান্ডার সঙ্গেও তার সাক্ষাৎ হয়েছে। এই সাক্ষাৎগুলো দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের গভীরতার প্রমাণ।

ভবিষ্যতের পথ

মোদির কুয়েত সফর জিসিসি'র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আলোচনার গতিকে ত্বরান্বিত করবে। গালফ কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদির উপস্থিতি উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এই ঐতিহাসিক সফর ভারত এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মজবুত ঐতিহ্য গড়ে তুলবে।

novelonlite28
umchltd