আমেরিকার রাজনীতি, ব্যবসা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি – সর্বত্রই ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের উজ্জ্বল উপস্থিতি প্রবাসীদের সাফল্যের নতুন মাত্রা যোগ করছে। ট্রাম্প প্রশাসনে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসন্ন নিয়োগের খবর এই সাফল্যের গল্পকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লির আমেরিকান সেন্টারে ‘ইন্ডিয়ান ডায়াস্পোরা – ডিফাইনিং সাকসেস ইন দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আমেরিকায় ভারতীয়দের অবদান ও প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
৪৫ লক্ষাধিক সদস্য নিয়ে আমেরিকার প্রবাসী ভারতীয় সম্প্রদায় দেশটির অন্যতম বৃহৎ ও সফল অভিবাসী সম্প্রদায়। ভারতের বৈচিত্র্যময় আঞ্চলিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে আগত এই সম্প্রদায় প্রযুক্তি, চিকিৎসা, শিক্ষা, রাজনীতি এবং শিল্পকলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় ভারতীয় আমেরিকানদের শিক্ষার হার ও আর্থিক সচ্ছলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
শিক্ষা: অগ্রগতির স্তম্ভ
প্রবাসী ভারতীয়দের সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো শিক্ষার প্রতি অগাধ আগ্রহ। পারিবারিকভাবে শিক্ষাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা তারা আমেরিকাতেও ধরে রেখেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টেম) সহ বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে তারা উজ্জ্বল সাফল্য পেয়েছে। এইচ-১বি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় দক্ষ ভারতীয় পেশাজীবীদের আগমন এই দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে। প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে এবং তাদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অবদান রাখছে।
উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন
গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নতুন স্টার্টআপ – সর্বত্রই ভারতীয়দের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। গুগলের সুন্দর পিচাই ও মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা হলেন এই সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্বাস্থ্যসেবা, অর্থ, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ভারতীয় উদ্যোক্তারা সাফল্যের ধ্বজা উড়িয়েছেন। ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর আমেরিকান পলিসির ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন মোতাবেক, এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের আমেরিকান স্টার্টআপের প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রভাব
আমেরিকার রাজনীতিতে প্রবাসী ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তাদের সাফল্যের আরেকটি প্রমাণ। ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, প্রমিলা জয়পাল, রাজা কৃষ্ণমূর্তির মতো জনপ্রতিনিধিরা এই প্রভাবের প্রতীক। অভিবাসন সংস্কার, সংখ্যালঘুদের অধিকার, আমেরিকা-ভারত সম্পর্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
সাংস্কৃতিক কূটনীতি
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে প্রবাসী ভারতীয়রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উৎসব, খাবার, চলচ্চিত্র, শিল্পকলার মাধ্যমে তারা ভারতীয় সংস্কৃতিকে মূলধারার আমেরিকান সমাজে স্থান করে দিয়েছে। হোয়াইট হাউসে দীপাবলি উদযাপন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মিন্ডি ক্যালিং, ঝুম্পা লাহিড়ী, এম. নাইট শ্যামালান আমেরিকান সংস্কৃতিতে অবদান রেখেছেন।
সম্প্রদায় ও ভবিষ্যৎ
ইন্ডিয়ান আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সের মতো সংগঠনগুলি প্রবাসী ভারতীয়দের সাফল্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নবীন প্রজন্ম পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের মতো নতুন ক্ষেত্রে কাজ করে যাবে বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন: