ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ 

শিখ ভোট ও কানাডা-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক

বৈশালী বসু শর্মা

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শেয়ার

শিখ ভোট ও কানাডা-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক

ব্রাদার্স কিপার, ধাক-দুহরে, ধালিওয়াল, সংঘেরা ও মাল্লি-বাত্তার মতো ইন্দো-কানাডিয়ান পাঞ্জাবিদের নিয়ে গঠিত গ্যাংগুলো কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (বিসি), আলবার্টা, ম্যানিটোবা ও অন্টারিও জুড়ে। এসব সংগঠনের সদস্যরা জড়িত অস্ত্র ও মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, মানি লন্ডারিং এমনকি গুপ্তহত্যার মতো কর্মকাণ্ডে। তাদের সহিংসতা সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করেছে ২০০৪ সালে বিসিতে গঠিত কম্বাইন্ড ফোর্সেস স্পেশাল এনফোর্সমেন্ট ইউনিট (সিএফএসইইউ)।

১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়া কনিষ্ক বোমা হামলার মামলায় খালাস পাওয়া কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোল্ডি ব্রার এবং লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে ইন্দো-কানাডিয়ান গ্যাংগুলোর স্পষ্ট সম্পৃক্ততা রয়েছে। পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুজ ওয়ালা ও রিপুদমন সিং মালিকের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা রয়েছে ওই দুজনের।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সুরেতে পাঞ্জাবি কানাডিয়ানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত ১৮ জুন সেখানে খুন হন শিখ নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার। ভুয়া পাসপোর্টে ১৯৯৫ সালে কানাডায় প্রবেশ করে টরন্টোতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে সেখানে আশ্রয় দাবি করেছিলেন। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই নারী তাকে সেখানে অভিবাসন পেতে সহায়তা করেন। কানাডার নাগরিকত্বও পেয়ে যান তিনি।

সেখানে বসতি গেড়ে তিনি ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব প্রকাশ করতে থাকেন। তাকে কানাডার নো-ফ্লাই লিস্ট ও  ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশেও রাখা হয়েছিল।
গ্যাংস্টার আরশদীপ সিং দালা, মনিন্দর সিং বুয়াল এবং মনদীপ সিং ধালিওয়ালের সঙ্গে তার সংগঠন খালিস্তান টাইগার ফোর্স (কেটিএফ) পাঞ্জাবের গোপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় সমস্ত হত্যাকাণ্ডের এক তৃতীয়াংশের পেছনে রয়েছে এই সংগঠন।

কুখ্যাত এমন সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও গত সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের সম্ভাব্য জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। যদিও সেই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে সেটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে ভারত।
বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষের মধ্যে উভয়েই কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা স্থগিত করেছে। এমনকি কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করেছে ভারত সরকার।  

খালিস্তান ইস্যুতে কানাডা একটি ভিন্ন অবস্থান রয়েছে আগে থেকেই। ১৯৮২ সালে ট্রুডোর বাবা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোর সময়ে খালিস্তানি সন্ত্রাসী তালবিন্দর সিং পারমারের প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছিলেন ভারতের সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পিয়েরে ট্রুডো। পরে ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট কনিষ্কে বোমা হামলা চালিয়ে ৩২৯ জনকে হত্যার ঘটনায় যুক্ত ছিলেন তালবিন্দর সিং।

এখন শিখ নেতা নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের বিরুদ্ধে এমন এক সময়ে অভিযোগ উঠেছে যখন কয়েক আগেই শেষ হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। জাস্টিন ট্রুডো সরকারের মেয়াদে খালিস্তান ইস্যুতে নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। লিবারেল নেতা ট্রুডো কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে কম নির্বাচনী সমর্থন পেয়েছে। তিনি সমর্থন পেয়েছিলেন জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি), যারা কানাডার মাটিতে খালিস্তান ইস্যুতে গণভোট  প্রকাশ্যে সমর্থন করে।
কানাডার কনজারভেটিভ বিরোধী নেতা পিয়েরে পোইলিভরে ট্রুডোকে সরকারের হাতে যে প্রমাণ রয়েছে তা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এই কনজারভেটিভ পার্টি কানাডার নির্বাচনে এর আগে শিখদের ভোটের কারণে ধাক্কা খেয়েছে।

কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলোকে বিকাশের সুযোগ দিচ্ছে- ভারতের এমন দাবির বিপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণের অভাব আছে। খালিস্তানপন্থিদের সঙ্গে বোঝাপড়ার বৃদ্ধির জন্য এমনকি যুক্তরাজ্য সম্প্রতি ৯৫ হাজার পাউন্ডের তহবিল গঠন করেছে।
সূত্র : মডার্ন পলিসি

novelonlite28
umchltd