ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 

ট্রুডোর খালিস্তান অবস্থানে প্রভাব পড়বে গণতন্ত্রে 

সঞ্জয় পুলিপাকা ও মোহিত মোসাদ্দি

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শেয়ার

ট্রুডোর খালিস্তান অবস্থানে প্রভাব পড়বে গণতন্ত্রে 

সম্প্রতি বছরগুলোতে কানাডা-ভারত সম্পর্ক নিম্নাভিমুখী হয়েছে। সোমবার হাইস অব কমেন্সে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে যে ভারতীয় এজেন্টরাই কানাডার নাগরিক হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতি ঘটেছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারেতে একটি শিখ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাইরে এ বছরের জুন মাসে অজ্ঞাত হামলাকারীরা নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করে।

নিষিদ্ধ সংগঠন খালিস্তান টাইগার ফোর্সের সদস্য ছিলেন নিজ্জার। ভারত সরকার তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিজ্জার বেশ কয়েক বছর ধরে ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের তালিকায় ছিলেন। ২০১৮ সালে পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর কাছে হস্তান্তর করা নয়জন ওয়ান্টেড ব্যক্তির তালিকায় তার নাম ছিল। 
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রুডোর সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে। তার অভিযোগকে অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর প্রাক্তন প্রধান বলেছেন, ট্রুডোর অভিযোগগুলো একেবারে উদ্ভট। অভিযোগের প্রমাণ এখন পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে শেয়ার করা হয়নি।

ট্রুডোর যে অভিযোগ তাতে তার সরকারকে এগিয়ে এসে জনসাধারণের সামনে প্রমাণ হাজির করা উচিত। শক্ত প্রমাণ ছাড়া জনসম্মুক্ষে কথা বলার ভুল সিদ্ধান্তকেও স্বীকার করে নেয়া উচিত। ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে জাস্টিন ট্রুডোর বিবৃতি একটি যোগসূত্র এবং কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, অভিযোগগুলো যদি প্রমাণিত হয় তবে এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের একটি বড় লঙ্ঘন হবে ।

আর যদি কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের কাছে এখনও শক্ত প্রমাণ না থাকে, তাহলে তিনি কেন এমন একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন তা আশ্চর্যের বিষয়। এই বিবৃতি শুধু ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্যই নয় বরং ন্যাটোতেও কানাডার মূল্যায়নকে প্রভাবিত করবে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ট্রুডো ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিজেকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বিরোধীদল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (NDP) এর সাথে একটি আশ্চর্য চুক্তি করেন। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন জগমিত সিং, যিনি কথিত খালিস্তানি আন্দোলনের সমর্থক।

ট্রুডো জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিলে কানাডায় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যকে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে ঘোষণা করা উচিত কিনা তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি গণভোটের আয়োজন করা হয়। গণভোট সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষের মতামত প্রকাশের জন্য সংগঠিত হয়, যা তারা তাদের স্বদেশ বলে দাবি করে। যাই হোক, দূরবর্তী দেশগুলোতে প্রবাসীদের তাদের স্বদেশের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে মতামত চাওয়া সেই সমস্ত লোকের সাধারণ ইচ্ছা এবং আগ্রহকে ক্ষুন্ন করে যাদের নামে গণভোট সংগঠিত হয়।

কানাডা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের গণভোটের ফলাফলকে সমর্থন করেনি। যাই হোক, কানাডিয়ান নাগরিকরা একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশকে ভেঙে ফেলার জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। কানাডা সরকারের উচিত ছিল এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা। 

ভারতের একটি স্থায়ী এবং বৈধ অভিযোগ রয়েছে যে কানাডা খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে আতিথেয়তা দিচ্ছে যারা সহিংসভাবে নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করেছে। ১৯৮২ সালে, ভারত সরকার কানাডিয়ান সরকারকে খালিস্তানি সন্ত্রাসী সংগঠন বাব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের প্রধান তালভিন্দর সিং পারমারের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলেছিল। তবে কানাডা সরকার সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। কয়েক বছর পরে তালবিন্দর সিং পারমার পরিকল্পনায় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২ কনিষ্কে বোমা হামলায় ৮২ জন শিশু সহ ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

novelonlite28
umchltd