ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ 

ধাপে ধাপে কর্মসূচির কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ

ঢাকা এজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

শেয়ার

ধাপে ধাপে কর্মসূচির কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ

টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটেছে আওয়ামী লীগ সরকারের। সব মিলিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে গেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দলটি।

গত ৫ আগস্ট পতনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলা করে দলীয় কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি।

হাসিনার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এক অর্থে উধাও হয়ে গেছেন। এ যেন আকাশ থেকে মাটিতে পতন। অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বর্ডারে ধরা খেয়ে কারাগারে। কেউ কেউ আবার প্রাণ হারিয়েছেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানামুখি কথা হচ্ছে। ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে কি দলটি?

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলছেন, অচিরেই দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হবে। ধাপে ধাপে কর্মসূচিতে হরতালের কথাও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

কিন্তু তৃণমূলে সংগঠনের যে দুর্বল অবস্থা সেখানে দলকে চাঙা করা চ্যালেঞ্জ হবে বলেই অনেকে মনে করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ দল হিসেবে জনগণের মুখোমুখি কীভাবে হবে সেটা হচ্ছে দলটির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ জনগণের সামনে কীভাবে আবার দাঁড়াবে। মানে কী কৌশল নিয়ে দাঁড়াবে, কী বার্তা নিয়ে নিয়ে দাঁড়াবে, কী উদ্দেশ্য নিয়ে দাঁড়াবে এবং কী কর্মসূচি নিয়ে দাঁড়াবে। আবার জনগণের সামনে আসলেও জনগণ তাদের বার্তাকে কীভাবে নেবে এগুলো এখনো অনিশ্চিত।


নেতারা প্রকাশ্যে নেই, কর্মীরা কীভাবে সামনে আসবে?

হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর ধাপে ধাপে তাকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে প্রকাশ্যে আসতে দেখা গেছে। যদিও প্রকাশ্যে আসা বলতে ফোনালাপ এবং বিবৃতির মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার মধ্যেই সীমিত।

প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনা ফোনালাপের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সামনে আসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর গত ১২ আগস্ট। সেসময় একটি জেলার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তার কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন দলের নেতারা। এরপর মাসখানেক ধরে শেখ হাসিনা কথা বলেছেন মূলত বিভিন্ন এলাকার তৃণমূলের অপরিচিত নেতাদের সঙ্গে। এসব ফোনালাপ পরে প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।

তবে তৃতীয় ধাপে এসে তাকে প্রথমবারের মতো কথা বলতে দেখা যায় দলীয় কোনো ফোরামে। যেটা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বর মাসে। মূলত প্রবাসী আওয়ামী লীগের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠকে টেলিফোনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সর্বশেষ এখন দলের দেশে এবং বাইরে অবস্থানরত সব স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে খবর দিচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য দলকে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় করা।

কিন্তু দেশের ভেতরে যেখানে দলের কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না সেখানে দল কীভাবে সংগঠিত হবে সেটা একটা প্রশ্ন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও সেটা দলের কার্যক্রমে বাধার কারণ হবে না।

কিন্তু নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই যখন তৃণমূলে ক্ষোভ তখন সেটা নিয়ে কী ভাবছে দল? এমন প্রশ্নে দলে পরিবর্তনের কথা বলেছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমাদের ভেতরে যারা খারাপ আছে, গণধিকৃত যারা, যাদের দেশের জন্য কাজ করার যোগ্যতা নেই, তাদেরকে তো স্বাভাবিকভাবেই বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে। যেখানে আওয়ামী লীগের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেগুলো আলোচনা করে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই দলীয় সভানেত্রীর নেতৃত্বে আমরা সংশোধন করব, সংযোজন করব, প্রয়োজনে বিয়োজন করা হবে।

বাহাউদ্দিন নাসিম আরও বলেন, উপজেলা-জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যোগাযোগ করেছেন, কথা বলেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন।

কর্মসূচি কী হবে?

বাহাউদ্দিন নাসিম বলছেন, দলের নেতা-কর্মীরা ‘কর্মসূচি চায়’।

তবে কী কর্মসূচি আসবে সেটা স্পষ্ট না করলেও তিনি জানিয়েছেন হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কথাও আলোচনা হয়েছে দলীয় ফোরামে।

তিনি আরও বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি আমাদের আছে। নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি চায়। অচিরেই আমাদের কর্মসূচি আসবে। তবে এটা আসবে ধাপে ধাপে। এভাবে শেষ পর্যন্ত হরতালের কর্মসূচিতেও যাওয়ার চিন্তুা-ভাবনা আছে আমাদের।- বিবিসি

novelonlite28
umchltd