আদানি গ্রুপের সাথে বড় দুই চুক্তি বাতিল করল কেনিয়া

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:৫৯ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ভারতের বিতর্কিত ধনকুবের গৌতম আদানির সাথে হওয়া দু’টি বড় চুক্তি বাতিল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আদলত গৌতম আদানি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এ সিদ্ধান্ত নিল নাইরোবি।

এ দুটি চুক্তির একটি হলো কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দর সংস্তার ও পরিচালনা এবং দ্বিতীয়টি হলো বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের জন্য দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা ভারতের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে তিনি ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ প্রস্তাব করেছিলেন এবং তা গোপন রেখে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন।

আদানি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটরদের আনা অভিযোগকে "ভিত্তিহীন" বলে অস্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার উইলিয়াম রুটো কেনিয়ার পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, "যদি দুর্নীতির বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আসে, আমি কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হব না।” তার এই বক্তব্যে পার্লামেন্টে উপস্থিতি আইনপ্রণেতারা চিৎকার করে সমর্থন জানায়।

আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দর জোমো কেনিয়াট্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ১৮৫ কোটি  ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল। চুক্তি ছিল যে তারা সেটি ৩০ বছরের জন্য পরিচালনা করবে। বিমানবন্দর প্রকল্পের অধীনে নতুন রানওয়ে এবং উন্নত যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল।

এছাড়া, বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও ছিল।

তবে এসব চুক্তি কেনিয়ার মানুষ খুব একটা পছন্দ করেনি। অনেকেই দুর্নীতির আশঙ্কা করছিলেন।

বিমানবন্দর চুক্তি নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বিমানবন্দর কর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেছিলেন, কারণ তারা মনে করতেন যে এই চুক্তির ফলে অনেক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।

কেনিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী অপিও ওয়ানডায়ি বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটিতে বলেছিলেন যে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ প্রকল্পে কোনও দুর্নীতি বা ঘুষের ঘটনা ঘটেনি।

প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বিশেষ করে, তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বারবার ওঠা অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে।

তিনি আরও জানান, তার সরকার এখন বিমানবন্দর ও জ্বালানি প্রকল্পের জন্য নতুন অংশীদার খুঁজতে কাজ শুরু করবে।

যে কারণে আদানি গ্রুপের এই অবস্থা

গত বছর জানুয়ারিতে এক সপ্তাহেই প্রায় ২৫০০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত ধনসম্পদ উধাও হয়ে গেছে আদানির।

সে সময় নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।

বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ গতবছর তাদের এক প্রতিবেদনে  আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে “কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির” অভিযোগ এনেছে।

নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক এই কোম্পানির “শর্ট-সেলিং” এর ব্যাপারে বিশেষত্ব রয়েছে। এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেলে, সুবিধা অর্জনের জন্য, ওই শেয়ারের ব্যাপারে আর্থিক অবস্থান নিয়ে থাকে।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

রিপোর্টেও এও দাবি করা হয় যে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির “উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ” রয়েছে - যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে আরো অভিযোগ করা হয় যে ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।

আদানি গ্রুপ অবশ্য অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তারা অস্বীকার করেছে।

“পরিষ্কারভাবে, আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার মূল্যের ওপর এই রিপোর্ট এবং তার অসমর্থিত তথ্যের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ নিজেরাই স্বীকার করেছে যে আদানির শেয়ার পড়ে যাওয়া থেকে তারা লাভবান হবে,” বলছে আদানি গ্রুপ।

গৌতম আদানি এই হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকিও দিয়েছেন।

এর পরপরই হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে তারা এ ইস্যুতে আদালতে লড়াই করতে প্রস্তুত।

সূত্র : বিবিসি বাংলা