জনপ্রশাসন সংস্কারের সাম্প্রতিক জটিলতা কীভাবে দূর হবে?

জিয়া আরেফিন আজাদ

প্রকাশিত : ১২:৪২ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:২০ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ মঙ্গলবার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আরও নয়টি কমিশনের সাথে জনপ্রশাসন সংস্কারে একটি কমিশন গঠন করে। ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সাথে একটি মতবিনিময়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এবং বিসিএস স্বাস্থ্যকে ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার সুপারিশ করা হবে। এই দুটি পেশার জন্য বিচার বিভাগের মতো পৃথক কমিশন গঠন করা হবে। সেই কমিশনই তাদের পরিচালনা করবে। সেই সাথে তারা এটাও জানিয়েছে প্রজাতন্ত্রের উপসচিব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দান করা হবে। তবে ৫০ শতাংশ পদ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে।

কমিশনের ম্যানডেট হলো, সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সাথে আলোচনা করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা। সেই সময়সীমা রক্ষা করতে কমিশন ৩১ ডিসেম্বর তাদের প্রস্তাব ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এত বড় একটি কাজের জন্য যত বিস্তৃত ও বহুপক্ষীয় আলোচনা দরকার, তার সামান্যই সম্পন্ন হয়েছে। ২৩টি ক্যাডারকে একত্রে সভা ডেকে একটি মতবিনিময় হয়েছে। আর একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে সেটি অনলাইন ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের ক্যাডার সার্ভিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ দুটি পেশা হলো বিসিএস স্বাস্থ্য এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা। এই দুটি পেশার প্রতিনিধিদের সাথে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই তাদেরকে ক্যাডার বহির্ভূত করার মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে শেয়ার করা হয়। স্বাভাবিকভাবে ওই দুটি পেশা থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। অপরপক্ষে ৭৫ শতাংশ কোটাকে কমিয়ে ৫০ শতাংশে নামানোর প্রস্তাব প্রশাসন ক্যাডার এবং ২৫ ক্যাডার উভয়পক্ষই প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রশাসন ক্যাডার বিদ্যমান অবস্থা স্থায়ী বা আরও বর্ধিত করতে চায়। ২৫ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন চায় কোটা ব্যবস্থা বিলোপ করে মেধার ভিত্তিতে উপসচিব পদে নিয়োগ।

বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের জনপ্রশাসনে অনেক অসঙ্গতি আছে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করতে এটি সংস্কারের বিকল্প নেই। স্বাধীনতার পর হতে প্রশাসনিক সংস্কারের অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জনকল্যাণের দিক থেকে সেই উদ্যোগগুলো কতটা কার্যকর হয়েছে তা পর্যালোচনা করা দরকার। যে সকল মৌলিক বিষয়ে ঐক্যমত ছিল সেগুলো কেন বাস্তবায়ন হলো না সেটা খতিয়ে দেখা জরুরি। সার্বিক প্রস্তুতি ছাড়া নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসলে জটিলতা বৃদ্ধি পাবে।

রাষ্ট্রের মালিক জনসাধারণ। প্রশাসনিক সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত সাধারণ মানুষের কল্যাণ। কিন্তু আপামর জনসাধারণের চাওয়াকে ধারণ করবে কে? কেবল একটি মামুলি প্রশ্নমালাই এত বড় বিষয়টিকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করবে? সংস্কার বাস্তবায়ন করবে রাজনৈতিক দল। যে সংস্কার তাদের প্রতিকূলে যাবে সেটা কি টেকসই হবে? দ্বিতীয় কথা হলো, জনপ্রশাসন সংস্কারে যে কমিশন গঠিত হয়েছে তার সদস্যরা কোন মানদণ্ডে নির্বাচিত হয়েছেন? ৩ অক্টোবর যখন কমিশন গঠনের গেজেট প্রকাশিত হল, দেখা গেল আটজন সদস্যের ছয়জনই প্রাক্তন সচিব। বাকি দুইজনের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। ২৫ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন ও অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে থেকে প্রতিক্রিয়া এলো। ২৪ অক্টোবর একটি সংশোধিত গেজেটে আরও তিনজন পেশাজীবীকে সংযোজন করা হলো। কিন্তু এই উদ্যোগ যে যথেষ্ট হয়নি তা প্রমাণিত হয়েছে স্বাস্থ্য ক্যাডারকে কমিশনের অধীন নেওয়ার প্রস্তাবকে হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক সর্বাত্মক প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে।

জনপ্রশাসন সংস্কারে যদি আমরা আন্তরিক হই, তাহলে এই বিষয়ের গভীরে যেতে হবে। কোন ধরনের সংস্কার চাচ্ছি তার দার্শনিক অবস্থানটা পরিষ্কার করতে হবে। সংস্কারের সুফলভোগী হবে জনসাধারণ। কাঠামো সংস্কারে বিদ্যমান ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। সেই ঝুঁকি নিতে কি আমরা প্রস্তুত? আরও দেখতে হবে, নায্যতা ও উপযোগিতার দিক দিয়ে বিষয়টি ঠিক আছে কি না।

বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগের মূল কাঠামো ক্যাডার সার্ভিস দ্বারা বিন্যস্ত। এর চূড়ায় রয়েছে সচিবালয় যেখানে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনে আমরা প্রাদেশিক কাঠামোর মধ্যে ছিলাম। আইনের বিধান অনুযায়ী স্বাধীন দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মবিভাগ তৈরি করতে গিয়ে নয়টি বছর চলে যায়। উপসচিব ও তদুর্ধ্ব পদগুলোর গঠন ও নিয়োগ নিয়ে ১৯৭৯ সালে সিনিয়র সার্ভিস পুল আদেশ জারি হয়। ১৯৮০ সালে ক্যাডার কম্পোজিশন রুলসের মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসগুলো বিন্যস্ত হয়। এই দুটি সার্ভিস একে-অপরের পরিপূরক। ক্যাডার সার্ভিসগুলোকে সিনিয়র সার্ভিস বা সুপিরিয়র সার্ভিসের সিঁড়ি হিসেবে সাজানো হয়েছিল। আর সুপিরিয়র সার্ভিসকে কর্মবিভাগের নিউক্লিয়াস হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। পরিতাপের বিষয় হলো, সৃষ্টির পর থেকে গত ৪৬ বছরে সিনিয়র সার্ভিস বা সুপিরিয়র সার্ভিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। অবস্থানগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে একটি পেশা এর প্রায় পুরোটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এই বিষযগুলো নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ ক্যাডার (বর্তমানে ২৫) লাগাতার প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। ফলাফল আরও খারাপ হয়েছে। ১৯৮৯ সালে এসএসপি আদেশ বাতিল করা হয়। এরপর আইন ছাড়াই চলে এক দশক। ১৯৯৮ এ সরকার প্রশাসন ক্যাডারের জন্য উপসচিব পদের ৭৫% কোটা সংরক্ষণ করে আদেশ জারি করে। ক্ষতিগ্রস্তরা এই বিষয়ে মামলা করে। মহামান্য হাইকোর্ট কোটা সংরক্ষণকে অবৈধ বলে রায় দেয়। আপিলেট ডিভিশন কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখে। যুগ্ম সচিব ও উপরের পদে কোটা বাতিল করার ফলে সচিবালয়ের শীর্ষ পদসমূহে প্রশাসন ক্যাডারের নিরংকুশ আধিপত্য বিস্তারলাভ করে।

শুধু সচিবালয়ে নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পে কমিশন থেকে শুরু করে সকল কমিশনে একটি সার্ভিসের একচেটিয়া দেখা যেতে থাকে। ২০০১ সাল থেকে চালু হওয়া সংখ্যাতিরিক্ত পদোন্নতির চাপে ভিন্ন ক্যাডারের অধিদপ্তরগুলোতেও প্রশাসন ক্যাডারের পদায়নের নজির বাড়তে থাকে। সার্বিকভাবে জনপ্রশাসন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে একটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে উপসচিব পদের একটি বড় অংশ (৭৬৭ টি) বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত করা হয়েছে। এতে করে সুপিরিয়র সার্ভিসের সংজ্ঞা ও অস্তিত্বের বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই ২৫ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন নতুন করে সংগঠিত হয়ে উপসচিব পদে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রস্তাবগুলোকে দুইভাবে দেখা যায়। উপসচিব পদে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার কথা বলে বৈষম্যের বিষয়টিকে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আবার প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলে তারা বিষয়টিকে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সালিশির পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছেন। এতে আইন ও নীতির দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। এই প্রস্তাবের সাথে বৃহত্তম দুটি পেশাকে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে একত্র করলে সংস্কার বিষয়ে কমিশনের কমিটমেন্ট নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে আনার ক্ষেত্রে পেশা দুটির পদোন্নতি সমস্যাকে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। অপরপক্ষে উপসচিবকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করার বিষয়ে রক্ষণশীলতাকেও প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতি সুযোগ সংকুচিত হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। স্পষ্টতই এখানে দুই ধরনের বিচার দেখা যাচ্ছে। পদোন্নতি সমস্যা সমাধানের জন্য যে কোনো ক্যাডারের কাঠামোর মধ্যেই সমাধান খোঁজা উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার ব্যতিক্রম হওয়া উচিত নয়।

কমিশন গঠন বিষয়ে শিক্ষা বা স্বাস্থ্য ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের অনীহার মূল কারণকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ১৯৮০ সালে ক্যাডার সার্ভিস গঠন হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি দফায় দফায় সংস্কারের নামে এই দুটি পেশার পরিধি খণ্ডিত করা হয়েছে। নব সৃষ্ট প্রাথমিক অধিদপ্তর, মাদরাসা অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর- প্রতিটিতেই প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জন্ম থেকে আজ অবধি মাত্র চারজন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির মাধ্যমে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় পুরোটা সময় চলতি দায়িত্ব দিয়ে এত বড় ক্যাডারটির নেতৃত্ব পরিচালনা করা হয়। সমগ্র ক্যাডারটি আটকে আছে চতুর্থ গ্রেডে। পাহাড়প্রমাণ এই বৈষম্য দূর করার একমাত্র উপায় হলো ক্যাডার সার্ভিস থেকে বেরিয়ে কমিশনের আওতায় যাওয়া- এই কথা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে না। আইনি কাঠামো থাকার পরেও যেখানে বছরের পর বছর বৈষম্য তৈরি হয় সেখানে কমিশন গঠন হলে আরও অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অন্যান্য বাস্তবতায় এমন অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ দুটি সেবা খাতকে ঠেলে দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি সংকট সৃষ্টি করবে। সার্ভিস দুটির ক্ষোভ ও উদ্বেগকে সংস্কার কমিশনের সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত। এখন পর্যন্ত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রতিনিধিদের সাথে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। অপরপক্ষে প্রশাসন ক্যাডারের সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা সচিবালয়ে বড় ধরনের জমায়েত করে কমিশনের উপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করে এক্সক্লুসিভ সংলাপের বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। এতে কারো আপত্তি থাকবে না যদি অন্যরাও সমান সুযোগ পায়। শক্তিশালী কোনো পেশার প্রতি তাদের পক্ষপাত রয়েছে এমন আশংকা তৈরি হলে পুরো প্রক্রিয়াটা বাধাগ্রস্ত হবে। পেশার প্রতিনিধিদের কথা শোনার পর জনগণের সকল পর্যায়ে কথা বলতে হবে। এত বড় উদ্যোগ যদি আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের পুরাতন বৃত্তে আটকে যায় তা হবে দুঃখজনক।

ত হলে সমাধান কী? সমাধান রয়েছে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে। উপসচিব যদি প্রজাতন্ত্রের পদ হয় তা হলে সেটা কোটা ব্যবস্থা থেকে উন্মুক্ত করা হবে না কেন- এই মৌলিক প্রশ্নটির সমাধান করতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিটি ক্যাডারকে সমান সুযোগ দেওয়া হবে কি না। অতীতের সংস্কার কমিশনগুলো সমগ্র কর্মবিভাগকে তিনটি গুচ্ছতে বিন্যস্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিটি ক্যাডার কর্মকর্তা তার পছন্দমতো গুচ্ছ বেছে নিবেন এবং সেই অনুযায়ী ক্যারিয়ার বিকাশ ঘটাবেন। এটাও একটা পদ্ধতি হতে পারে। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হোক, প্রতিটি পেশার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, মৌলিক এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হতে যেন কিছুটা জড়তা রয়েছে।

জনপ্রশাসন বা কর্মবিভাগ বলতে কেবল ক্যাডার সার্ভিস বা নির্দিষ্ট ক্যাডারকে বোঝায় না। নন ক্যাডার সার্ভিসগুলোকেও বিকাশের পথ করে দিতে হবে। সীমিত হলেও তাদের উপরে উঠার সিঁড়ি থাকতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে। যেনতেনভাবে পদোন্নতি বা ক্যাডারভুক্তির কারণে প্রতিটি দপ্তরে নন ক্যাডার জনবলের সাথে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ২৫ ক্যাডারের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে যে আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের ইস্যুটিকে পাশ কাটানোর জন্য নন ক্যাডারদের সাথে ক্যাডার দ্বন্দ্ব উসকে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে সচিবালয়ের সাথে অধিদপ্তরগুলোর যে সম্পর্ক একই ধরনের সম্পর্ক জেলা ও উপজেলায় ডেপুটি কমিশনার ও ইউএনওদের সাথে জেলা-উপজেলার অন্যান্য পেশাজীবীদের। মাঠ পর্যায়ের বিদ্যমান কাঠামোকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক বলা যায় না। নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেসির একচেটিয়াও প্রশাসন ক্যাডারের হাতে। ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতার অপব্যবহারে অন্যান্য ক্যাডার ও নন ক্যাডার কর্মচারীদের অসংখ্য হয়রানি-অসম্মানের নজির আছে। প্রতিবাদ করলেই শাস্তি। আরেক পক্ষে সকল কাজের বৈধতা। এই বিষয়গুলো আমাদের কর্মবিভাগকে গতিশীল হতে বাধা প্রদান করছে। সংস্কার করতে হলে এই বিষয়টিরও একটি নিস্পত্তি করতে হবে।

এই ধরনের নানা জটিল পরিস্থিতির জালে আমাদের কর্মবিভাগ বিন্যস্ত। অতীতের লিগাসিকে আমরা রাতারাতি ত্যাগ করতে পারব না। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করাটা হবে আত্মঘাতী। তাই কমিশনকে তার দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মপদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে পেশাজীবীরা মনে করে। পেশাজীবীদের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে মধুর আন্তঃসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। নায্যতাভিত্তিক সমাধানই কেবল সেই পথ খুলে দিতে পারে। এখন পর্যন্ত আমরা সন্দেহ-অবিশ্বাসের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছি। খোলা মন নিয়ে আলোচনা করলে সেই বৃত্ত থেকে বের হওয়া সম্ভব। কমিশনকে নিজেদের প্রতি সেই বিশ্বাস রাখতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক সেই পরিবর্তন সংঘটিত হলে অন্যদের মধ্যে তা সঞ্চারিত করা কঠিন কিছু হবে না। সময়সীমা বা প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে এই পরিবেশ সৃষ্টি করাই সবচেয়ে জরুরি।

লেখক :
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইংরেজি বিভাগ
বৃন্দবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ