চীনের উদ্ভাবন কর্মসূচি নাকি শিল্প গোয়েন্দাগিরির আঁতুড়ঘর?
ঢাকা এজ ডেস্ক
প্রকাশিত : ০৮:০৮ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার
চীনের উচ্চাভিলাষী উদ্ভাবন কর্মসূচিগুলো আসলে শিল্প গোয়েন্দাগিরির আড়াল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিশ্বনেতা হওয়ার লক্ষ্যে চীন বিদেশে উদ্ভাবন কেন্দ্রের এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
‘জাতীয় পুনর্জাগরণ’ কৌশলের অংশ হিসেবে চালু হওয়া এই কেন্দ্রগুলো উন্নত প্রযুক্তি অর্জন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু কর্পোরেট ও প্রযুক্তিগত গোয়েন্দাগিরির অভিযোগের কারণে এসব উদ্যোগের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিদেশি উদ্ভাবন কেন্দ্র: কৌশল নাকি ছলচাতুরি?
২০১৫ সাল থেকে চীন ‘বিদেশি প্রতিভা বিদেশি উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা কেন্দ্র’ সক্রিয়ভাবে বিকশিত করছে। ২০২৪ সাল নাগাদ চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি উন্নয়ন অঞ্চল জুড়ে কৌশলগতভাবে অবস্থিত ৩০টি এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বের নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির সঙ্গে সহযোগিতার আড়ালে চীন কি প্রযুক্তিগত গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে? সুজু শিল্প পার্ক এবং বেইজিংয়ের উদ্ভাবন হাবের মতো কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক দক্ষতা আকর্ষণ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তরের নামে কি প্রযুক্তি চুরি করছে?
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিনিময় কর্মসূচি: প্রতিভা আকর্ষণ নাকি গোয়েন্দা নিয়োগ?
‘হাজার প্রতিভা পরিকল্পনা’ এবং ‘কনফুসিয়াস প্রতিষ্ঠান’ এর মতো কর্মসূচির মাধ্যমে চীন বিদেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং প্রযুক্তিবিদদের নিয়োগ দিচ্ছে। কিন্তু এই কর্মসূচিগুলোর আড়ালে বৌদ্ধিক সম্পত্তির চুরি এবং অননুমোদিত প্রযুক্তি স্থানান্তরের অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন সিনেটের এক তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী গবেষকদের চীনের স্বার্থ রক্ষা এবং গবেষণার তথ্য চীনকে দিতে বাধ্য করা হয়।
কর্পোরেট গোয়েন্দাগিরি: লুকোচুরির খেলা?
চীনের বিদেশি উদ্ভাবন কেন্দ্র এবং প্রতিভা কর্মসূচিগুলো কর্পোরেট গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অভিযুক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের কর্তৃপক্ষ এমন ঘটনা উন্মোচন করেছেন যেখানে চীনা ছাত্র বা ভিজিটিং স্কলাররা আইনসিদ্ধ সহযোগিতার আড়ালে সংবেদনশীল কর্পোরেট তথ্য এবং গবেষণার তথ্য চুরি করেছেন।
কিছু ক্ষেত্রে, চীনা উদ্ভাবন কেন্দ্রের সঙ্গে অংশীদার বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো তাদের মালিকানাধীন প্রযুক্তির অননুমোদিত প্রতিলিপি হওয়ার অভিযোগ করেছে। এই কার্যকলাপ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জৈবপ্রযুক্তি এবং মহাকাশ যাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিযোগিতামূলক প্রান্ত দৃঢ় করার জন্য রাষ্ট্রীয় অনুপ্রেরণায় গোয়েন্দাগিরির প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ: বিশ্বাসের সংকট?
চীনের উদ্ভাবন কর্মসূচির দ্বৈত উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে।
সুযোগ নাকি ঝুঁকি: ভবিষ্যতের পথ?
চীনের উদ্ভাবন কেন্দ্রগুলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবদান রাখলেও, গোয়েন্দাগিরি ও বৌদ্ধিক সম্পত্তির চুরির অভিযোগ উদ্বেগজনক। বিশ্বায়ন ও উদ্ভাবনের সুযোগ গ্রহণের পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।