লিউঝি: চীনের গোপন কারাগারের কাহিনী

ঢাকা এজ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৮:২৫ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার

চীনের অভ্যন্তরে গোপন কারাগারের বিস্তার চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) প্রচারিত তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি জটিল ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সিসিপি দুর্নীতি দমন ও শাসনব্যবস্থা উন্নত করার জন্য এই কারাগারগুলো, ‘লিউঝি’ সুবিধা নামে পরিচিত, ব্যবহার করছে বলে দাবি করলেও, এর পেছনে রাজনৈতিক ক্ষমতা দৃঢ় করা, একনায়কতান্ত্রিক শাসন বজায় রাখা এবং ভিন্নমত দমনের গভীর উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সিসিপির কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা পরিদর্শন কমিশনের অধীনে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই কারাগারগুলোকে উপস্থাপন করা হলেও, এর প্রকৃত বিস্তার ও উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। লিউঝি ব্যবস্থা প্রকাশ্য বিচার ব্যবস্থার বাইরে জাতীয় তদন্ত কমিশনের (এনএসসি) অধীনে পরিচালিত হয়, যা সিসিপিকে তদন্ত, বিচার এবং রায় দেওয়ার ক্ষমতা চীনের আইন ব্যবস্থার জবাবদিহিতার বাইরে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রাষ্ট্র বা পার্টির অভ্যন্তরে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থান রুখে দেওয়া সম্ভব হয়।

লিউঝি কেন্দ্রগুলির গোপনীয়তা এবং অস্বাভাবিক পদ্ধতি উদ্বেগজনক। বন্দীদের প্রায়ই আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না, বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় এবং জোরপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হতে হয়। দুর্নীতি দমনের আড়ালে সত্য প্রকাশকারী, স্বাধীন চিন্তাবিদ এবং সংস্কারকামীদের মতো পার্টির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও এই কেন্দ্রগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করছে।

চীনের অর্থনৈতিক মন্দা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় লিউঝি ব্যবস্থার বিস্তার কাকতালীয় নয়। সামাজিক অসন্তোষ ও বৈচারিক মতভেদ থেকে উদ্ভূত অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দমনে সিসিপি এই কেন্দ্রগুলিকে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

পূর্বের দুর্নীতি বিরোধী পদ্ধতি ‘শুয়াংগুই’-এর গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে লিউঝি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হলেও, কাঠামোগত পরিবর্তনের আড়ালে আইনবহির্ভূত কার্যকলাপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে ঢেকে রাখার প্রয়াস চলছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

লিউঝি কেন্দ্রগুলির আইনবহির্ভূত কার্যকলাপ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুন্ন করছে, বিশেষত শিক্ষিত শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বিদেশী সরকারগুলিও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য এই কেন্দ্রগুলিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে।

সিসিপির লিউঝি কারাগার ক্ষমতার একাধিপত্য বজায় রাখার একটি বহুমুখী কৌশল। এই কেন্দ্রগুলি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, ভয় দেখানো এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সমসাময়িক চীনের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের গতিপ্রকৃতি বুঝতে এই বিষয়টির বিশ্লেষণ অপরিহার্য।