মেইক ইন ইন্ডিয়া: বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের নতুন কৌশল
ফাফানো ফাসা ও জাখেলে মাদেলা
প্রকাশিত : ০৪:০৫ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার
বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের উত্থান কি ‘অনিবার্য’? বৈশ্বিক বিশ্লেষকরা ভারতকে পরবর্তী মহাশক্তি হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি, জার্মানি ও জাপানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভারতের এই উত্থান কি অপ্রতিরোধ্য?
ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কূটনৈতিক আত্মবিশ্বাস সকল প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিরুদ্ধাচরণ করে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে এবং ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে অস্বীকার করেছে।
এই কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে ভারত পশ্চিমা দেশ ও কোম্পানিগুলির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর জাতিসংঘে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রথম দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থানের সঙ্গে এই কূটনৈতিক সাফল্যের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।
ফলস্বরূপ, বৈশ্বিক বিরোধিতা সত্ত্বেও দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর মধ্যে ঈর্ষণীয় অবস্থানে থেকে ভারত ২০২৪ সাল সফলভাবে শেষ করেছে। বৈশ্বিক বিশ্লেষকরা ২০২৫ সহ ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক পূর্বাভাস দিচ্ছেন।
‘মেইক ইন ইন্ডিয়’ কৌশল গ্রহণের পর গত দশকে ভারত অভূতপূর্ব উত্থান দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো অর্থনৈতিক সংস্কার করেছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের তুলনায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভারতের অংশ দ্বিগুণ হয়েছে। ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ ঘোষণার পর গত দশকে এই বৃদ্ধির গতি কিছুটা মন্থর হলেও, সামগ্রিকভাবে গত দুই দশকে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভারতের অংশ দ্বিগুণ হয়েছে। রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’, উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা (পিএলআই) পরিকল্পনা এবং দৃঢ় বাণিজ্য চুক্তিগুলি এই বৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। সেবা রপ্তানি পণ্য রপ্তানির তুলনায় ভালো কর্মক্ষমতা দেখিয়েছে।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের মার্টিন উলফের মতে, ২০৫০ সালে ভারতের ক্রয়ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ৩০% বেশি হবে। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই উত্থান আরও দ্রুত হতে পারে। বৈশ্বিক পণ্য রপ্তানিতে ভারতের অংশ ২০০৫ সালে ০.৯% থেকে ২০২৩ সালে ১.৮% এ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেবা রপ্তানি ২% থেকে ৪.৩% এ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত নিজেকে বিশ্বের সেরা সেবা রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বৈশ্বিক স্তরে ভারত পণ্য রপ্তানিতে ১৬তম এবং সেবা রপ্তানিতে সপ্তম স্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক স্তরে ভারতের আমদানির অংশও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত দুই দশকে ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের বৈশ্বিক পণ্য রপ্তানির অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও, ভারত তার অবস্থান দৃঢ় করেছে।
গত দশ বছরে ভারত অবিশ্বাস্য প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। তবে ২০২৪ সাল মূলত ২০ এবং ১০ বছর আগে গৃহীত প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার বাস্তবায়নের বছর হিসেবে বিবেচিত হবে। ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার বিশ্ববাসী প্রশংসার সঙ্গে দেখছে।
* ফাফানো ফাসা, দ্য সেন্টার ফর অল্টারনেটিভ পলিটিক্যাল এন্ড ইকোনমিক থট-এর চেয়ারপার্সন; জাখেলে মাদেলা, ইঞ্জিনিয়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকার ইকোনমিক ইন্টারভেনশন ফোরাম (ইআইএফএসএ)-এর চেয়ারম্যান। এখানে প্রকাশিত মতামত তাদের নিজস্ব।