Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /home/ph4m74q3/public_html/common/config.php on line 186
আটলান্টিকের ঢেউয়ে মৃত্যুর মিছিল: কখন থামবে এই ট্র্যাজেডি?

আটলান্টিকের ঢেউয়ে মৃত্যুর মিছিল: কখন থামবে এই ট্র্যাজেডি?

ঢাকা এজ ডেস্ক

প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বুধবার

গত মাসে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রায় ৫০ জন পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা আটলান্টিক নৌকা ট্র্যাজেডি হিসেবে পরিচিতি পেলেও, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চলতি বছর জুনে গ্রিসের উপকূলে ৩০০ পাকিস্তানি এবং এপ্রিলে লিবিয়ার উপকূলে ৭ জন পাকিস্তানি একইভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ইউরোপের স্বপ্ন দেখা এসব মানুষের মৃত্যু মানবপাচারের ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতা এবং এর বিপজ্জনক প্রকৃতির সাক্ষ্য বহন করে।

দ্বিমুখী হুমকি

একদিকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে এই পাচারের পেছনে বিশাল অর্থের লেনদেন জড়িত। ইতালিতে অভিবাসীর সংখ্যা এক বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৮০,০০০ ছুঁয়েছে।

জাতিসংঘ এবং ইইউ-এর এক গবেষণা মতে, গত তিন বছরে ২৪,০০০ পাকিস্তানি অবৈধভাবে ইইউ-তে প্রবেশ করেছে। প্রতি অভিবাসীর জন্য গড়ে ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরে হিসাব করলে, এই পাচার বাণিজ্যের আকার প্রায় ৮০ বিলিয়ন টাকা। উত্তর আফ্রিকার উপকূল হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে চলতি বছর ভূমধ্যসাগরে ২,২০০ জনেরও বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।

‘পুল’ এবং ‘পুশ’ ফ্যাক্টর

অভিবাসী পাচারকে ‘পুল’ এবং ‘পুশ’ ফ্যাক্টরের আলোকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ‘পুল’ ফ্যাক্টর হলো ধনী দেশের উন্নত জীবনযাত্রার আশা, যা অভিবাসীদের আকর্ষণ করে। আর ‘পুশ’ ফ্যাক্টর হলো দেশীয় দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সামাজিক অস্থিরতা ইত্যাদি, যা মানুষকে নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য করে।

জিটি রোড সংলগ্ন এলাকা, যেমন গুজরাট, মান্দি বাহাউদ্দিন, সিয়ালকোট এবং গুজরানওয়ালা, থেকে অভিবাসনের হার উচ্চ। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এই এলাকার বেকারত্বের হার কম। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হল অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা এবং আরও ভালো জীবনের আকাঙ্ক্ষা।

মিথ ভাঙার প্রয়োজন

অভিবাসী পাচার সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ধারণা ভুল। এটি শুধু দরিদ্রদের সমস্যা নয়; বরং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা এর প্রধান কারণ। গ্রেপ্তার ও বিচার এই পাচার বন্ধে কার্যকর নয়, কারণ লাভের মার্জিন অনেক বেশি এবং শাস্তি তুলনামূলকভাবে কম। বিপদের ঝুঁকি জেনেও মানুষ এই যাত্রায় ঝুঁকছে কারণ সাফল্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি এবং পরিবারের বড় আকার তাদের উৎসাহিত করে।

সমাধান কোথায়?

শুধুমাত্র প্রচার প্রচারণা বা প্রয়োগকারী বাহিনীর কার্যক্রম দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং বহুমুখী কৌশল।

আইনগত অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি: আধা-দক্ষ কর্মীদের জন্য আইনগত পথ সুগম করা।

অনিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ: অস্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

বিনিয়োগ-ভিত্তিক অভিবাসন: বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউরোপে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেওয়া।

দক্ষতা সনদপত্র ও মানসম্মতকরণ: আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং সনদ প্রদান করা।

আইন প্রয়োগ পর্যায়ে হস্তক্ষেপ: পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর কার্যক্রম গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
অর্থপাচার রোধ: পাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ জব্দ করা।