১৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১৪৬ গুণ, স্ত্রীর নামে নেই সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ১০:৩৩ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ রোববার

গেল ১৫ বছরে অর্থাৎ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন মেয়াদে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৩ গুণ। আর এই সময়ের মধ্যে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৪৬ গুণ। শামসুল হক টুকুর দাখিল করা নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হলফনামায় দেখা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শামসুল হক টুকু বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৮ টাকা। অর্থাৎ গেল ১৫ বছরে (তিন সংসদ মেয়াদে) তার আয় বেড়েছে ১৩ গুণ।

অপরদিকে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি অস্থাবর সম্পদের হিসেব দিয়েছিলেন ৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি দেখিয়েছেন ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৫৫৩ টাকা। অর্থাৎ তার বর্তমান অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৪৬ গুণ।    

হলফনামা সূত্রে আরও জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২৪১ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে সেটি ছিল ১১ লাখ ৪ হাজার ২৮৯ টাকা। অনুরূপভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ১৩ কোটি ৭৪ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ টাকা সমমূল্যের। একাদশে গিয়ে সেই সম্পদ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ৫৪৬ টাকা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩ কাঠা জমির মালিকানা দেখিয়েছিলেন। পরবর্তী দশম ও একাদশ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সেটির তথ্য উল্লেখ নেই। নবম হলফনামায় তার ৮ তোলা স্বর্ণ থাকলেও পরবর্তী দশম, একাদশ ও দ্বাদশে এসে সেটি ১০ তোলায় পরিণত হয়েছে। যার দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা তোলা। নবম হলফনামায় কোনো যানবাহন খরচ বা সম্পদ দেখানো হয়নি। দশমে ৭১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮৫ টাকা, একাদশে ৯৩ লাখ টাকা এবং দ্বাদশে ৭৬ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

নবম সংসদের হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে নগদ ছিল ৮ হাজার টাকা। ব্যাংকে ছিল ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ ছিল। যার মূল্য ৫ হাজার টাকা তোলা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২০ লাখ টাকা মূল্যের অর্ধেক বাড়ির শেয়ার ছিল। দশম সংসদের হলফনামায় এসে সব মিলিয়ে দেখানো হয় ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ টাকা। ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাসা, একটি ওয়ারিশ ও দুইটি হেবা সূত্রে ৪৪ লাখ টাকা সমমানের সম্পদের মালিক হন। একাদশে এসে সব মিলিয়ে তিনি ৬৬ লাখ ৭২ হাজার ৮৩ টাকা সম্পদের মালিক হিসেবে হলফনামায় দাখিল করা হয়েছে।

এদিকে দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ বিবরণী দেওয়া হয়নি। দ্বাদশ হলফনামায় তিনি একটি ব্যাংক থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকার ঋণ গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন। আর একাদশে তিনটি ব্যাংক, দশমে তিনটি ব্যাংকের ঋণের তথ্য দাখিল করেছিলেন।

এবারের হলফনামায় তার একটি পিস্তল রয়েছে, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯০০ টাকা। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৬ টাকা। এছাড়া নিজের নামে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। তার নগদ অর্থ রয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৪৭ লাখ ৬ হাজার ২৮৭ টাকা।

শামসুল হক টুকুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এম কম, এলএলবি। পেশা আইনজীবী। তিনি এই পেশা থেকে বার্ষিক ২ লাখ টাকা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাবদ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। আর সম্মানীভাতা বাবদ তিনি বছরে আয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু নিজ নির্বাচনী এলাকায় পৈত্রিক ভিটা ও পাবনা শহরে একটি বাড়ি রয়েছে।