ব্রহ্মপুত্র গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা!
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৪০ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:০৩ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার
আস্ত ব্রহ্মপুত্র নদ ধীরে ধীরে গিলে ফেলছে প্রভাবশালীরা। শেরপুর-জামালপুর সীমান্তে চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু সংলগ্ন নদী ভরাট করে বিশাল স্থাপনা করা হয়েছে অনেক আগেই। সম্প্রতি ওই স্থাপনা অঞ্চল পাড় হয়ে সেতুর উত্তর নদী অংশের বিশাল এলাকায় হাজার হাজার ট্রাক বালু ভরাট করে তোলা হয়েছে বিশাল বাণিজ্যিক মার্কেট। এতে নদীর মধ্যভাগ এখন মার্কেট মালিকানাধীন। আর ১৫-২০ গজ দখল করতে পারলেই নদীর অপমৃত্যু ঘটবে।
স্থানীয়রা বলছে, নদী দখল করে দোকানপাট নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্থানীয় চেয়ারম্যন আকবর আলী ও তার স্বজনরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে চোখের সামনেই নদী গিলে ফেলা হলো। নদী ও নদীর বালু দখলের এই সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন চেয়ারম্যানের ছেলে ও ভাইয়েরা। নদীর ৯৯ একর জমির বালু মহালের ইজারা নিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা। ফলে নদী ও নদীর আশেপাশের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন চেয়ারম্যানের।
স্থানীয় নদীর চরে জায়গা নেওয়া গরীব মানুষদের ভাষ্য, নদীর বুকে জেগে উঠা চরের জায়গা গুলোতে চাষাবাদ করে গরীব মানুষরা। কিন্তু ইচ্ছা হলেই ওই আবাদি জমি কেটে বালু তুলে দিয়ে যায় চেয়ারম্যান। এর বিরুদ্ধে টু শব্দটি করারও কেউ নেই। কাউকে বিচার দিলে কিছুই হয় না। উল্টো চেয়ারম্যানের মামলা- হামলায় এলাকা ছাড়া হতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্থাপনা ব্রহ্মপুত্র নদের উপর নির্মিত সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মিত সেতু। এই সেতুর উত্তর পাশের মাথা থেকে সেতুর প্রায় অর্ধেক অংশ নদীর জমি দখল করে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর বিশাল অংশ এখন প্রভাবশালীদের দখলে। সরকার বিশাল টাকা ব্যয় করে নদী খনন করছে। সেই খনন করা বালু ও ইজারার বৈধ-অবৈধ বালু দিয়ে নদী ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করে জমজমাট বাণিজ্য চলছে। অনেক আগেই নতুন এই মার্কেটের আরেকটু উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল অট্টালিকা। বিনা বাধায় এই অট্টালিকা করার লোভ থেকেই প্রভাবশালী ওই চেয়ারম্যানকে আর কেউ থামাতে পারেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, ওই অট্টালিকায় চেয়ারম্যান নিজেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আর নতুন মার্কেটে ৩৭টি বিশাল বিশাল ঘর করা হয়েছে। এই ঘরগুলোর প্রতিটি থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়েছে। আর প্রতি মাসে ভাড়া হিসেবে নেওয়া হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা করে।
স্থানীয়রা জানায়, ওই চেয়ারম্যানের সঙ্গে জেলার আরও প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ফলে আইনের ফাঁকে অধরাই রয়ে যায় ওই চেয়ারম্যান। প্রশাসনের কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামানোর চেষ্টা করলেও রহস্যজনক কারণে তারা আবার নিরব হয়ে গেছেন।
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, আমি নদী দখল করিনি। ওই সম্পদ আমার পূর্ব-পুরুষদের নামে রেকর্ড পর্চা আছে। আমার জায়গাতে আমি স্থাপনা করেছি। কোনো ক্ষমতা খাটানো হয়নি। আমার শত্রুরা এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমি আমার বৈধ কাগজ নিয়ে লড়ব।
সড়ক ও জনপথের (সওজ) দাবি, সেতু করার সময় নদী ও স্থাপনার ভারসাম্য রক্ষায় সরকার সেতুর শুরু ও শেষের দুই দিকের ডান-বাম পাশের ১০০ ফুট করে নদীর জায়গার নিরঙ্কুশ অধিকার সওজকে লিখিতভাবে দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেতুর উত্তর পাশের এক ইঞ্চি জায়গাও আর খালি নেই। অবৈধ দখলমুক্ত করতে গত ১৬মার্চ সরকারের দায়িত্বশীলদের একটি চিঠি দেয় সওজ। রহস্যজনক কারণে কেউ কর্ণপাত করেনি। ইতিপূর্বেও দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরুর প্রস্ততি নিলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়। সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেছেন, এই দখলের ফলে নদী ও সেতুর ভারসাম্য ব্যাপকভাবে নষ্ঠ হবে। অবৈধ এই স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বড়সর অভিযান পরিচালনা করতে সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হবে।
শেরপুর জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেছেন, নতুন যোগদান করেছি। আগে কী হয়েছে, জানি না। এই এলাকার সরকার ও জনস্বার্থ রক্ষা করতে সরকার জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছে। কে কত ক্ষমতাবান সেটা দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখে অতি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে আমি এই চেয়ারে থাকব না। সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির কোনো সুযোগ নেই।